কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪?
কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪:কোটা সংস্কার আন্দোলন বর্তমানে এটি বাংলাদেশে জনপ্রিয় একটি টপিক বললেই চলে, কোটা সংস্কার কি বা ছাত্ররা কেনই এই কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য রাস্তা মেনেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হলো।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪
কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাংলাদেশে বর্তমানে সমালোচনার ঝড় বইছে, বিশিষ্ট সমাজসেবক এবং রাষ্ট্রনায়কগণ সহ বিভিন্ন মহলের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সরকারি চাকরিতে প্রায় সব গ্রেডে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আগামী রোববার রাজধানীতেগণপথ যাত্রা করেন গণপথ যাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবই স্মারক লিপি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমন্বয়করা, গত শনিবার ১৩ জুলাই ঠিক সন্ধ্যায় এক সম্মেলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন সেখানে তাদের দাবি উপস্থাপন করা হয় এবং সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পর্যায়ে সকল ক্লাস বর্জন এবং ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি তারা ঘোষণা দেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, সব গ্রেডের সরকারি চাকরিতে কোটা যুক্তি সংস্কারের লক্ষ্যে আগামীকাল রোববার ঠিক সকাল ১১ টায় আমরা সকলেই গণপথ যাত্রা ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি করবো। এই কর্মসূচি শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থগারের সামনে থেকে সকল শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে অংশ নিবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে যারা ক্ষুদ্র, নিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযুদ্ধ সন্তানের কোটা পাঁচ শতাংশে অন্তর্ভুক্ত হলে যথেষ্ট। তিনি এটিকে ৫% যৌক্তিক বলে মনে করছেন এবং তিনি আরো বলেন আমরা মুক্তিযুদ্ধা কোটার বিরোধী নয়, বিরোধিতা করছি না তবে কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের গবেষণা ভিত্তিক তথ্য থাকলে তা নিয়ে পর আলোচনা হতে পারে।
কোটা আন্দোলন স্লোগান
কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের স্লোগানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশের ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিকগণ। ওনারা বলেন গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি হল থেকে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের মিছিল থেকে একটি শব্দ কানে ভেসে আসে সেটি হল তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার, এবং আমরা সবাই রাজাকার এই স্লোগানটি তাদের খুবই মর্মাহত করেছেন বলে তারা জানিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্বাধীনতার বিরোধিতা কারী ও যারা বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ছিলেন তাদের প্রতিনিধিত্ব দাবি করে এমন স্লোগান উচ্চারিত হওয়ার পরপরই তারা ব্যথিত ও মর্মাহত হয়েছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ তারা বলেন মুক্তিযুদ্ধরা দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে এই দেশে স্বাধীনতা অর্জন করেছেন তারা এই অধিকারের একমাত্র তারাই দাবিদার ও হকদার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের একাংশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এই ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাই।এবং তারা আরো বলেন, ছাত্ররা তাদের ভুল বুঝতে পেরে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দাবিয়া আদায়ের পথে পরিচালিত হবে।
কোটা আন্দোলন কি
কোটা বলতে সাধারণত কোন নির্দিষ্ট একটি অংশকে বুঝানো হয়,সাধারণত একটি জনগোষ্ঠীর জন্য যে কোটা সরকারিভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে সেটিকেই কোটা বলা হয়। মূলত সমাজে পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর মানুষগুলোকে পড়াশোনা আওতাভুক্ত ও ছাত্রসহ নানা ক্ষেত্রে এই কোটা ব্যবস্থা থাকে। বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এই কোটা পদ্ধতি চালু আছে, এটি মূলত ব্রিটিশ শাসন আমলে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ভারতীয়দের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু ছিল। ঠিক পরবর্তী সময়ে পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন মুসলিমদের জন্য কোটা বেবস্থা করা হয়, এমনকি পাকিস্তান আমলেও প্রদেশ ভিত্তিক কোটা পদ্ধতি চালু ছিল।
কখন থেকে কোটা পদ্ধতি চালু হয়
১৯৭২ সাল থেকেই বাংলাদেশে চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা জেলা ও রী কোটা ছিল, তৎকালীন সরকারীস্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলো কোটা বন্টন এর বিষয়ে ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এই আদর্শ বলা হয় প্রথম শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানের প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত ২০% মেধা এবং বাকি ৮০শতাংশ জেলা কোটা রাখা হয়। এই ৮০ শতাংশ জেলা কোটার মধ্যেই ৩০ শতাংশ কোথায় ছিল মুক্তিযুদ্ধ এবং ১০% কোটা হলো মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারী এবং বরাদ্দাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ কোটার বড়ো একটি অংশই বরাদ্ধ রেখেছিলো মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য।
কখন কোটা বন্টনে পরিবর্তন আনা হয়
১৯ ১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো কোটা বন্টনের পরিবর্তন আনা হয়, এ পরিবর্তনের মধ্যে মেধাবৃত্তিতে নিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো এবং শুধু নারীদের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা আলাদা করা হয়। অর্থাৎ মোট ৪০% মেধা এবং ৩০ শতাংশই মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০% নারী ও দশ শতাংশ যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্ত নারী আর বাকি ১০% কেবল জেলা ভিত্তিক নিয়োগ নির্ধারণ করা হয়। এছাড়াও দেশের মধ্যে যারা ক্ষুদ্র নিয়ে গোষ্ঠী রয়েছে, তাদের জন্য কোটার পরিমাণ বাড়িয়ে তাদেরকেও ১৯৮৫ সালে কোটা পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে বলা হয় যে, ১ম ও ২য় শ্রেণীর পদসমূহের জন্য মেধাবৃত্তি কোথায় হবে ৪৫শতাংশ এবং জেলা ভিত্তিক কোটা হবে ৫৫শতাংশ। মোটেই ১০০% কোটার মধ্য থেকেই ৩০% মুক্তিযুদ্ধ কোটা ও মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ এবং উপজাতিদের জন্য পাঁচ শতাংশ পদ সমন্বয় করিতে হইবে। এবং পরবর্তীতে দেখা যায় ১৯৯০ সালে নন গেজেট পদ গুলোর নিয়োগের কোটা আঞ্চলিক পরিবর্তন হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে তা অপরিবর্তিত থাকে যা পরিবর্তন করা হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানও নাতি নাতনি কোটা
১৯৯৭ সালে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের আওতাভুক্ত করা হয়,কেবলমাত্র ৩০ শতাংশ কোটা ১৯৯৫ সালে কোটা বন্টন অপরিবর্তিত রেখে উপযুক্ত মুক্তিযুদ্ধের প্রার্থীদের পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র ও কন্যাদের জন্য তা বরাদ্দের আদেশ জারি করা হয়। তার বেশ কিছুদিন পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা কোটার পরিমাণ অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাচ্ছে না বলে এই মর্মে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেঠিক ওই সময় নির্দেশনা মানলে সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। ২০০২ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চাষ দলীয় জোট সরকারের সময়ে ঠিক আরেকটি পত্র জারি করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যেই বরাদ্দ কোটা বন্টনের বিষয়ে বর্তমানে জারি করা হয়েছিল সেগুলা পুনরায় বাতিল করা হয় এতে বলা হয় যে বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ধারিত কোটা ৩০% পূর্ণ না করে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিলো ২১ তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যেই নির্ধারিত ৩০% কোটা উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে উক্ত কোটার শূন্য পদ গুলো পূরণের জন্য (ক্যাডার ও নন ক্যাডার) এর মধ্যে থেকে মেধাবৃত্তিক তালিকায় শীর্ষ অবস্থানকারী প্রার্থীদের দিয়ে তা পূরণ করা যেতে পারে। এই মর্মে আদেশ জারি করে। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ কোটা ৩০ শতাংশ যোগ্য পাত্রী পাওয়া না গেলে সেই ক্ষেত্রে মেধা তালিকা ভিত্তিত্বে নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার দল গঠন করেন, তখন এই নির্দেশনা বাতিল করা হয়। ঠিক একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের জন্য যে কোটা পূরণ করা সম্ভব না হলে খালি পদ বহাল রাখার নির্দেশ দিয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়। এছাড়াও ২০১১ সালে কোটা পরিবর্তন আসে এমন সময় মুক্তিযোদ্ধার নাতি নাতিদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
উপসংহার: কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ নিয়ে বেশ কিছু তথ্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরেছি, আমি আশা করি কোটা সংস্কার নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য আজকেই এই পোস্টের মধ্যে আমি তুলে ধরেছি। আমার এই পোস্টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশই লাইক, কমেন্টস, ও শেয়ার করতে ভুলবেন না।