গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হয় কেন ও কি খেলে এই ব্যথা নিরাময় হয় :গর্ভাবস্থায় অনেকের তলপেটে ব্যথা হয়, কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা এই ব্যথা কি কারণে হয়ে থাকে। তাই আজকের রাতে এই পোস্টে আমরা জানবো গর্ব অবস্থায় তল পেটে ব্যথা কেনো হয় ও এই ব্যথা নিরাময় এর উপায়।
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথা হয় কেন ও কি খেলেএই ব্যথা নিরাময় হয়:গর্ভাবস্থায় অনেকের তলপেটে ব্যথা হয়, অনেকের ক্ষেত্রে এই ব্যাথা তীব্র আকারে ধারণ করে অনেকের আবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়। এই ব্যথার বিভিন্ন কারণ হয়ে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেশকিছু কারণ আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে জরাআয়ু বড় হয়ে প্রসারিত হলে রাউন্ড লিগামেন্টের কাছাকাছি চলে আসার কারণে অসহ্য যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়। ফলে হাঁটলে, হাঁচি , বা কাশি, হলে এই ব্যাথা অনুভূত হয় গর্ব অবস্থায় এই ব্যথা বেশ কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা
অধিকাংশ মায়েরা তাদের গর্ব অবস্থায় পেটে স্বাভাবিক যন্ত্রণায় ব্যথা এবং খিঁচুনি অনুভব করে থাকে, পেটে ব্যথার স্বাভাবিক কারণ এর মধ্যে একটি কারণ হলো বাড়ন্ত শিশুর বহন করার ফলে ওই গর্ভ অবস্থায় রোগীর পেশী জয়েন্ট গুলোর উপরে মারাত্মক চাপ পড়ে। তাই এই সকল মায়েদের পেটের নির্দিষ্ট সময়ে একধরণের অস্থিরতা বোধ করে, সে ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে হালকা পোষণ গরম পানিতে গোসল করলে বা বেদনা নাশক গরম জলের বোতল বা ব্যাগ ওই স্থানে রাখলে তাৎক্ষণিক ভাবে ব্যাথা থেকে কিছুটা নিরাময় পাওয়া যায়।
প্রথম ত্রৈমাসিকে পেট ব্যথা
সাধারণত প্রথম ত্রৈমাসিকের সময় গর্ভবতী মায়েরা তাদের পেটের মধ্যে খিচুনির ব্যথা অনুভব করতে পারে, এর অন্যতম কারণ হলো আগত শিশু স্বাভাবিক বিকাশের কারণ ঘটে থাকে। এছাড়াও খিঁচুনি বলতে মায়েদের পেটের দুই দিয়ে একটি টান লাগার মত অনুভূতি সৃষ্টি হয় যা জরায়ুর বিস্তারের সময় সাপোর্টে থাকা লিগামেন্ট ও বেশি সম্প্রসারিত হওয়ার কারণে হয়ে থাকে এছাড়া এটি গ্যাস ও পেট ফাঁপা কোষ্ঠকাঠিন্য বা যৌনসঙ্গমসহ অন্যান্য বিভিন্ন কারণে ও ঘটনা ঘটতে পারে।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে পেট ব্যথা
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক পেট ব্যথা অন্যতম একটি কারণ হলো গোলাকার লিগামেন্টের ব্যথা, যেটি বৃহৎ দুটি লিগামেন্টের জন্য জরায়ুতে কুঁচকির সঙ্গে সংযুক্ত করে। এর ফলে গোল লিগামেন্টের পেশী টি জরায়ুকে সাপোর্ট দেয় এবং তখনই এটি সম্প্রসারিত হতে থাকে। যার ফলে গর্ব অবস্থায় মায়েদের পেটে কাটার মত তীব্র ব্যথা অনুভব হতে থাকে, অনেক সময় এই তলপেটে হালকা ব্যথা থেকে তিব্র ব্যথা অনুভব হতে পারে। এতে ঘাবড়ানোর কোন কারণ নেই বিশেষজ্ঞ একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে ওষুধ খাওয়ার ফলে এই ব্যাথা থেকে অনেকটাই নিরাময় হওয়া সম্ভব।
তৃতীয় ত্রৈমাসকে পেট ব্যথা
গর্ভবতী মহিলাদের পেটেও পিঠে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা অনুভূত হয়,এর মূল কারণ হলো সন্তান জন্মের প্রস্তুতিতে মায়েদের শরীরের বিভিন্ন অংশের কোষগুলো সংকুচিত হতে থাকে। যার ফলে মায়েদের শরীর ওজন কিছুটা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার ফলে ওদের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা অনুভব করতে থাকে, এই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই প্রতি মাসে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের সেবনের মাধ্যমে পেটে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
গর্ভাবস্থার পেট ব্যথার লক্ষণ
গর্ব অবস্থায় মহিলাদের বিভিন্ন কারণে পেটে ব্যাথা হয়ে থাকে নিচে বেশ কিছু লক্ষণ আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হলো:
#গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েরা যখন প্রসাব করেন তখন তাদের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হতে পারেন।
#অধিকাংশ সময় গর্ভবতী মায়েদের 12 সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই তাদের পেটে বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা অনুভব হতে থাকে।
# প্লাসেন্টা হল ক্রমবর্ধমান ভ্রূণের জীবন–সহায়ক,সাধারণতএটির মাধ্যমে বাচ্চার খাদ্য এবং পুষ্টিগুলি পায় তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রসবের আগেই, প্লাসেন্টা জরায়ুর তার প্রাচীর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
#শিশু যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে তখন গর্ভবতী মায়ের জরায়ুর পেটে চাপ পড়ে যার ফলে এটি প্রসারিত হতে থাকে এবং শক্ত হয়ে যায়। এছাড়াও দ্বিতীয় মাসিকের সময় বাচ্চার আকার বড় হওয়ার সাথে সাথে কি অবস্থাঅ্যামনিয়োটিক তরলও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি পায়,এবং পেটের উপরে চাপ পড়ে।
#যদি গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে মধ্যে যদি পেটে প্রচন্ড ব্যাথা হয় সেই ক্ষেত্রে তা মিস ক্যারেজ বা অকাল গর্ভপাতের কারণ হতে পারে, এছাড়াও মিস ক্যারেজহওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে রক্তপাত এবং পেটে মোচড় দেয়া, যা মেয়েদের পিরিয়ডের সময়ও হয়ে থাকে।
#মূত্রনালী মূত্র অথবা প্রসাবের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়েদের পেটে অতিরিক্ত ব্যাথা হতে পারে যা পরবর্তীতে কিডনিতেও আক্রান্ত হতে পারে।
#বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থায় এফএন্ডি সাইডে এর ব্যথা নির্ণয় করা বেশ কঠিন, যেহেতু এ সময় গর্ভবতী মহিলাদের জরায়ু বড় হয়ে যায়। তখন এপেন্ডিক্স সরে গিয়ে তা নালি বা লিভারের খুব কাছে চলে যায় এর ফলে মেয়েদের বমি বমি ভাব, খাবার এ অরুচি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
#সাধারণত যেসব গর্ভবতী মায়েদের মায়েদের বয়স ৩৫ এর উপর হয় এবং ওজন বেশি হয়ে থাকে ওই সকল গর্ভবতী মায়েদের পিত্ত নালীতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। সেই ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে তা না হলে ব্যথা পেটের চারপাশে এই ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
গর্ভাবস্থায় পেটের ব্যথা নিরাময় করার উপায়
গর্ভাবস্থায় পেটে ব্যথা নিরাময় করা বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যথা নিরাময় করার পদ্ধতি গুলো নিচে তুলে ধরা হয়েছে:
#গর্ভাবস্থায় তলপেটের ব্যথা নিরাময় করার প্রথম উপায় হল পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়ম অনুসারে ওষুধ সেবন করা।
#অনেক সময় দেখা যায় গর্ভবতী নারীদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্যে খিচুড়ির সমস্যা অধিকাংশ দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে তলপেটে মেসেজ করতে হবে এতে করে রোগী কিছুটা শান্তি অনুভব করবে।
#গর্ভবতী মায়েদের অনেকে আছে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বুগে থাকে সেক্ষেত্রে এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে বাঁচতে অবশ্যই গর্ভবতী মাকে যোগ ব্যায়ামের মত কোমল ব্যায়াম মাঝে মাঝে করতে হবে।
#যখনই দেখবেন আপনাদের তলপেটে ব্যথা শুরু হয়েছে তখন তাৎক্ষণিকভাবে গর্ভবতী মায়েরা সারাদিনে প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে পারেন। এতে করেডিহাইড্রেশন এর মত সমস্যাগুলো থেকে রেহাই পেতে পারেন এবং ব্যথা অনেক টাই নিরাময় হয়ে যাবে।
#গর্ভাবস্থায় যখন মায়েদের তলপেটে ব্যাথা শুরু হয়, তখন তাদের খাওয়ার অরুচি চলে আসে সে ক্ষেত্রে অল্প করে বারে বারে খান এবং ফল ও সবজির মত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারে।
#যখনই দেখবেন আপনার ব্যথা তীব্র আকারে বাড়তেছে তখন প্রচুর পরিমাণ পানি খান এবং মুদ্রাসয় নিয়মিত খালি রাখুন।
অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন গর্ভবতী মায়েরা পেটে ব্যথা ওঠার পরে তারা অতিরিক্ত ছটফট করে। কোন অবস্থাতেই ছটফট করা যাবে না এবং হঠাৎ করে উঠবস করা যাবে না ধীরে ধীরে দাঁড়ানো বা বসার অভ্যাস তৈরি করতে হবে, এতে করে আপনার খিঁচুনির সম্ভাবনা এবারে কমে যাবে।
প্রশ্নোত্তর পর্ব:গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসে তলপেটে ব্যথার কেন হয় সেই বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হলো।
১)প্রথম ত্রৈমাসিকে পেট ব্যথা হলে করণীয় কি ?
উত্তর :এর অন্যতম কারণ হলো আগত শিশু স্বাভাবিক বিকাশের কারণ ঘটে থাকে। এছাড়াও খিঁচুনি বলতে মায়েদের পেটের দুই দিয়ে একটি টান লাগার মত অনুভূতি সৃষ্টি হয় যা জরায়ুর বিস্তারের সময় সাপোর্টে থাকা লিগামেন্ট ও বেশি সম্প্রসারিত হওয়ার কারণে হয়ে থাকে।
২)গর্ভাবস্থায় মুত্রনালী সংক্রমণ হলে করণীয় কি?
উত্তর :বিভিন্ন চিকিৎসকের মত অনুযায়ী, প্রায় ১০% গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভকালীন সময় মূত্রনালীর সংক্রমণ হয়ে থাকে এই ক্ষেত্রে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এ সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৩) প্রারম্ভিক অবস্থায় পেটের খিচুনি কেন হয়?
উত্তরঃ অধিকাংশই গর্ভবতী মায়েরা গর্ব অবস্থায় পেটের মধ্যে খিঁচুনি অনুভব করে সেই ক্ষেত্রে চিন্তার কারণ নেই বিশেষ করে যৌন মিলনের সময় একটি প্রচন্ড একটি প্রচণ্ড উত্তেজনার পর মহিলাদের খিঁচুনি অনুভব হতে পারে।
৪)গর্ভাবস্থায় মহিলাদের গল স্টোন কেন হয়?
উত্তরঃ এটি এক ধরনের পাথর যা মহিলাদের গর্ভবতী অবস্থায় চিত্তথলিতে হয়ে থাকে, যার ফলে পেটের বাম দিকে অংশে কেন্দ্রীভূত থাকে, অনেক সময় দেখা যায় এই ব্যথা পিটের চারিদিক ছড়িয়ে পড়ে।
৫)গর্ভাবস্থায় অ্যাপেনডিসাইটিস ব্যথা ব্যবহার করলে করণীয় কি?
উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় এই ব্যথা নির্ণয় করা কঠিন হতে পারে, কারণ এটি মহিলাদের জন্য উচ্চ ঝুঁকির সৃষ্টি কারণ হতে পারে। এটি হওয়ার ফলে জরায়ু বেড়ে যায় এবং অ্যাপেন্ডিস এর ব্যথা উপরে উঠে আসে এবং প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়।
পোষ্ট টেগ : গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন, গর্ভাবস্থায় প্রথমগর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন, গর্ভাবস্থায় পেটের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ, গর্ভাবস্থায় পেট বড় হয় কখন, গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে পেট ব্যাথা, গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথার দোয়া ,কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয়।
উপসংহার: গর্ব অবস্থায় প্রথম মাসের তলপেটে ব্যাথা কেন হয় এবং কি খেলে এই ব্যথা নিরাময় করা সম্ভব সে বিষয়ে বিস্তারিত আজকের এই আর্টিকেলে আমি তুলে ধরেছি নিয়ে আশা করি আপনাদের প্রশ্নের প্রয়োজনীয় উত্তর আজকের এই আর্টিকেলে পেয়ে যাবেন যদি আমারে পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করতে ভুলবেন না