বুকে কফ জমলে কি ঔষধ খেতে হবে?

 বুকে কফ জমলে কি ঔষধ খেতে হবে:আমরা অনেকে আছি যে, আমাদের ফুসফুসে সংক্রমণ হলে আমরা তেমন কোনো  গুরুত্ব দেই না।  যার ফলে আমাদের বুকে কফ জমে থাকে যা বড় ধরনের বিপদে আনতে পারে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে  আমরা জানবো বুকে কফ জমলে কি ওষুধ খেতে হবে। 


বুকে কফ জমলে কি ঔষধ খেতে হবে


                                 বুকে কফ জমলে কি ঔষধ খেতে হবে



অধিকাংশ মানুষের বুকে কফ জমে থাকার ফলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তবে শুধু বড় মানুষরাই নয় বাচ্চারাও এই সমস্যা বেশিরভুগে থাকে।  এই সমস্যা থেকে সমাধান পেতে অনেক মা বাবারা  বিভিন্ন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যেয়ে থাকেন এবং বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও এন্টিবায়োটিক শিশুদেরকে অথবা প্রাপ্তবয়স্কদেরকে দিয়ে থাকেন, তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য করা পাওয়ারের ওষুধ না খাওয়াই ভালো। 



                                     বুকে কফ জমে থাকার লক্ষণ


প্রতিদিন আমাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে শ্লেষ্মা তৈরি করে, প্রতিনিয়ত প্রায় এক লিটার শ্লেষ্মা নানা ভাবে  তৈরি হয়। এটি বিশেষ করে স্বাস্থ্য কে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে, তবে অতিরিক্তের শ্লেষ্মা জন্য সমস্যার  লক্ষণ হতে পারে।  এটির কারণেই সব চেয়ে বেশি শ্লেষ্মা তৈরী হয় যা আমাদের কফ নামে পরিচিত।  তার মধ্যে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য লক্ষণ নিচে তুলে ধরা হলো:


**এসিড রিফ্লাক্স:বিশেষ করে আপনাদের এসিড রিফ্লাক্স থাকলে এটি পাকস্থলীর এসিড  খাদ্যনালীর গলার মধ্যে চলে আসে। যার ফলে এটা গলাকে উক্ত্যক্ত করে ও শ্লেষ্মা নিঃসরণ করে করে এবং এই অতিরিক্ত  শ্লেষ্মা ফলেই বুকে কফ জমে যায়। 

**এলার্জি :আমাদের সমাজে অনেকে আছেন,যারা  এলার্জিতে ভুগে থাকে যেমন :চুলকানি, হাঁচি, বুকে কফ জমা, হাঁপানি, ইত্যাদির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে এলার্জি থাকে যা অতিরিক্ত শ্লেষ্মা হয়ে বুকে কফ জমতে পারে। 

**হাঁপানি:হাঁপানি যদি ও অধিকাংশ মানুষের একটি কমন সমস্যা, এটির মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট ও বুকে আঁটসাঁট অনুভূতি পাশাপাশি বুকের মধ্যে কফ পর্যন্ত পারে।  যা বিশেষ করে শাসনালীতে পদাহ সৃষ্টি করে এবং অতিরিক্ত শ্লেষ্মা তৈরি হয়। 


**ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণ:বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণের ফলে বুকে কম জমে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ফ্লু, একিউট ব্রনকাইটিস ও নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমনের ফলে  শ্লেষ্মা তৈরি করে, পরবর্তীতে এটি কাশির সঙ্গে বের হয়ে আসে।


 **হলুদ কফ:সাধারণত শরীরে বড় কোনো ধরনের সংক্রমণ থাকলে, কফের রং গারো হলুদ হয়ে যায়। বিশেষ করে যাদের সাইনাসের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় এই সমস্যা। 


**গোলাপি বা লাল:ফুসফুসের এক ধরনের তরল পদার্থ জমা হয়, যা চিকিৎসা পরিভাষায়এটির নাম হলো এডিমা, এটি একটি সংক্রমণ যা দীর্ঘদিন বুকে জমে থাকার অন্যতম কারণ। এর  যার ফলেই কফ গোলাপি বা লাল আকার ধারণ করে। 


**দীর্ঘস্থায়ী কাশি:কেউ যদি সাধারণত আট সপ্তাহে বেশি সময় ধরে, ঠান্ডা বা কফ জনিত সমস্যায়  ভুগে থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটি দীর্ঘস্থায়ী কফ। এটি  ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। 


**ক্রনিক মিউকাস: মিউকাস  যা ফুসফুসে রক্ষায় প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে  শ্লেষ্মা তৈরি করে, যখন এটি অতিরিক্ত বেশি হয়ে যায়। এক মাস বা তার অধিক সময় বুকে  কফ জমে থাকে, তবে এটি ফুসফুসে রোগের লক্ষণ হতে পারে। 


**কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া:অনেক সময় আমরা দেখতে পাই যে  কাশির সঙ্গে রক্ত বের হয়ে আসে।  এটি ফুসফুসের সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে, তবে এটি লক্ষণ মারাত্মক আকার হতে পারে এমনকি এটি ফলে  ক্যান্সারের লক্ষণ ও হতে পারে। 


**বুকে ব্যথা:আমাদের বুকে যখন আস্তে আস্তে করে কফ জমতে থাকে, তখন আমাদের কাশির সঙ্গে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়, এটিও ফুসফুসে সংক্রমনের কারণে হয়ে থাকে। 




বুকে কফ জমলে কি ঔষধ খেতে হবে


                            বুকের কফ বের করার ঘরোয়া উপায়


ঋতু পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো সর্দি, কাশি, এবং বুকে  কফ জমা।  তাই এ সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে তা নিচে আলোচনা করা হলো:


**আদা:বুকের কফ বের করার জন্য আদা বেস কার্যকরী এবং কফ  বের করার জন্য আপনাকে প্রথমত আদাকে  ভালোভাবে কুচি করে পানির সাথে মেশাতে হবে।  তারপর এটিকে ৫ থেকে ১০  মিনিট  পানিতে ফুটিয়ে নিন,আর পর এটি ডান্ডা হলে সামান্য পরিমাণ মধু ব্যবহার করুন।  দিনে অন্তত তিনবার এটি পান করলে বুকের কফ দূর হয়ে যাবে। 


**লবণ জল:বুকের কফ দূর করার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো লবণ পানি।  এটি সাধারণত শ্বাসযন্ত্র থেকে কফ  দূর করতে সাহায্য করে।  এক গ্লাস সামান্য গরম পানির সঙ্গে এক চামুচ লবন  মিশিয়ে নিয়ে, এটি অন্তত দিনে দুইবার পান করতে হবে। 


**লেবু ও মধু :আমরা সকলেই জানি যে  লেবু ও মধু আমাদের বুকের কফ সহ নানা ধরনের সমস্যা সাহায্য করে থাকে।  এছাড়া ও এটি ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি বুকের ভেতর থেকে কফ বের করে আনে এবং গলাকে পরিষ্কার করে। 


**হলুদ : হলদু এর  মধ্যে রয়েছে এক ধরনের কারকুমির নামের উপাদান, যা বুকের ভেতর থেকে কফ বের করে ও বুকের ব্যথা শ্বাসকষ্ট দ্রুত কমিয়াআনে। এ ছাড়াও এটি  এন্টিবায়োটিক হিসেবেও কাজ করে থাকে। 


**পেঁয়াজ :আমরা অনেকেই জানিনা এই পিয়াজে রয়েছে এক ধরনের যা এন্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।  বিশেষ করে পেঁয়াজের রসের সঙ্গে লেবু রস মধু ও পানি একসঙ্গে মিশ করে, ৫ থেকে ৭ মিনিট ফুঁটিয়ে  ননি এবং এটি দিনে তিনবার পান করুন। 


**আপেল সাইডার ভিনেগার:এক কাপ সামান্য গরম পানিতে ২ চা চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন এবং এর সঙ্গে এক চা চামুচ মধু মিশিয়ে নিন এটি দিনে অন্তত দুই থেকে তিনবার পান করুন দেখবেন বুকের ভেতর থেকে  বের হয়ে যাবে। 


**গরম তরল খাবার :প্রচুর গরম ও তরল  খাবার খেতে হবে, এতে করে বুকের  ফুসফুসে জমে থাকা কফ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়। 


**গার্গল করুন:বুকের কফ  থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এটি অন্যতম কার্যকারী উপায়।  বিশেষ করে  হালকা গরম পানি  লবন একসঙ্গে মিশিয়ে গলগালা করলেই গলা ব্যাথা সহ বুকের কফ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। 


**ইউক্যালিপটাসের তেল: ইউক্যালিপটাসের তেল কাশি ও কফ দূর করতে গুরুত্ত্ব পুন্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও এটি বুকে সরাসরি মালিশ করতে পারবেন। এটির আরেকটি গুন্ হলো এই তেল হালকা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে গোসল ও করা যাই। 




প্রশ্ন উত্তর পর্ব:বুকের ভেতরে কফ জমলে কি ওষুধ খেতে হবে, সে বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর নিচে দেওয়া হল:


১)বুকে কফ হলে কি করা উচিত?

উত্তর :পর্যাপ্ত গরম পানি পান করলে শ্লেষ্মা পাতলা হবে ও কাশির মাধ্যমে সহজে বের হয়ে যাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, গরম পানীয় বুকের শ্লেষ্মা দূর করে ব্যথা ও অন্যান্য অস্বস্তিকর অনুভূতি প্রশমিত করতে পারে। 

২)বেশি কাশি হলে কি করতে হবে?

উত্তর :১ চা চামচ মধুকে ২ চা চামচ লেবুর রসে মেশান এবং দিনে চারবার এটি গ্রহণ করুন।এতে করে বেশ উপকার পাওয়া যাবে। 

৩)লেবু খেলে কি সর্দি ভালো হয়?

উত্তর :লেবু আর মধু দুটোই সর্দির সময় কার্যকর। চায়ের সঙ্গে লেবু আর মধু যুক্ত করে খেলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের গুণ ভালোভাবে পাচ্ছেন। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। 

৪)গলায় কফ আটকে থাকলে কি ঔষধ?

উত্তর :এটি বুকের ভেতরের জমে থাকা শ্লেষ্মা পাতলা করতে সাহায্য করে তরল খাবার। এজন্য দৈনিক পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এর পাশাপাশি চা, স্যুপ’সহ স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন।



পোস্ট টেগ :বুকের কফ বের করার ঘরোয়া উপায়,বুকের কফ বের করার মেশিন,বুকে কফ জমে থাকার লক্ষণ,বুকের কফ বের করার এন্টিবায়োটিক,গলায় কফ জমলে ঔষধ,শিশুর বুকে কফ জমলে কি ঔষধ,বুকে কফ জমে শ্বাসকষ্ট হোমিওপ্যাথি ঔষধ,বুকে কফ হলে কি করা উচিত,বেশি কাশি হলে কি করতে হবে,লেবু খেলে কি সর্দি ভালো হয়,গলায় কফ আটকে থাকলে কি ঔষধ। 



উপসংহার: বুকে কফ জমলে কি ওষুধ খেতে হবে এবং কি করলে বুকের জমে থাকা কফ  দূর হবে।  সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আজকের এই পোস্টে আমি তুলে ধরেছি, আমি  আশা করি আপনাদের প্রশ্নের প্রয়োজনীয় উত্তর এই পোস্টের মধ্যে পেয়ে যাবেন। আমার এ পোস্টটি আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করতে ভুলবেন না। 




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url