শুকনো আমলকি খাওয়ার নিয়ম, এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা?

 শুকনো আমলকি খাওয়ার নিয়ম, এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা:আমলকি এটি একটি বহু পরিচিত ফল যা আমরা সচারচর  স্কুল, কলেজ , কিংবা খেলার মাঠে আশেপাশে ছোটোখাটো   ব্যবসায়ীদের বিক্রি করতে দেখা যাই। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা এই আমলকিতে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুন রয়েছে, তাই আজকের এই পোস্টে আমরা জানবো আমলকী  আমাদের শরীরের জন্য কতটুকু উপকার ও অপকার করে থাকে। 


শুকনো আমলকি খাওয়ার নিয়ম, এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা


     শুকনো আমলকি খাওয়ার নিয়ম, এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা


আমলকি মাঝারি ছোট্টো  একটি ফল,এতে প্রচুর  পরিমাণ এ  ভিটামিন সি রয়েছে।  এই  ফলে ডালিম এর চেয়েও ১৭ গুণ বেশি এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা পুষ্টিতে ভরপুর এবং এটি  খাওয়ার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীর  ভেতর থেকে  গ্যাসটির দূর করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও এই আমলকি  বিভিন্ন ধরনের ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, চুল পড়া  নিয়ন্ত্রণের কাজ করে থাকে এই  ফল। ঠান্ডা, জ্বর, কাশি, ভাইরাস, চর্ম রোগ, তর্কের সমস্যা, ইত্যাদি দূর করতে শুকনো আমলকী বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। 


                          প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত


বর্তমানে  প্রচুর গরম পড়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসজনিত সমস্যা প্রকোপ আকার ধারণ করেছে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, সহ নানা ধরনের সমস্যায়  মানুষ সম্মুখীন হচ্ছে।  এই পরিস্থিতিতে মানুষের  শরীলে ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়, যার ফলে মানুষের ভিটামিন সি চাহিদার  প্রয়োজন পড়ে।  আর সেই ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর একটি ফল হলো শুঁকনো আমলকী, এই ফলে   প্রচুর পরিনামে ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে,যা  একাধিক রোগের হাত থেকে বাঁচাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও যাদের চুল পড়ার  সমস্যা রয়েছে,এর  পাশাপাশি  বয়স বৃদ্ধি থেকে শুরু করে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে এই শুঁকনো আমলকী। পতিদিন সকালবেলা খালি পেটে একটি থেকে দুটো আমলকী ফল খাওয়া যেতে পারে  এতে সবচেয়ে বেশি উপকার হয়।  তবে দিনে দুটোর বেশি এই ফল খাওয়া ঠিক নয়, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। 




                 শুকনো আমলকী  খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা


প্রাকৃতিক ভেষজ গুণে  সমৃদ্ধ একটি ফল হলো  আমলকি ফল,আমলকিতে পেয়ারার চেয়েও দশ গুণ, এবং কাগজি লেবুর চেয়ে ও  তিনগুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে।  এছাড়াও অম্লকিতে কমলার চেয়েও ১৫ গুন বেশি আপেলের চেয়েও ১২০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে  যা আমাদের শরীরের আয়রন, ক্যালসিয়াম, পূরণ করে থাকে,  তাই নিচে এর বেশ কিছু উপকার তুলে ধরা হলো।


#তুরের যত্ন:আমলকি রস চুল পড়া রোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, এ ফলের রস চুলের গোড়াকে মজবুত করে এবং চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে থাকে। 


#যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে:আমলকি ফল  নিয়মিত খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের মৃত কোষগুলোকে সচ্ছল রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে মানুষ তার হারিয়ে যাওয়া যৌবনকে ফিরে পেতে বিশেষভাবে সহায়তা করে এই শুঁকনো আমলকী  ফল। 


#কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে:শুকনো আমলকির  রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও  পাইলসের সমস্যা দূর করে থাকে, এছাড়া এটি পেটের সমস্যা  বদহজম  এবং পেটের  বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে এই আমলকি ফল। 


#রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে:রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমলকির জুস্ বেশ কায্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া ও কফ, বমি, জ্বর, ইত্যাদি রোগ থেকে ও মুক্তি পাওয়া যায়। 


#অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে:যাদের অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির  সমস্যা রয়েছে তারা এক গ্লাস পানির সঙ্গে আমলকীর  গুড়া ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে অন্তত দুবার খেলে আপনাদের অ্যাসিডিটির  সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। 


#ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে:যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে  তারা আমলকীর  জুস্ খেলে তাদের ব্লাড সুগার লেভেল ও কোলেস্টেরল লেভেল  অনেকটাই  নিয়ন্ত্রণ  এ থাকে। 


#ত্বকের উজ্জলতায়: সাধারণত আমরা অনেকেই তর্কে যত্ন নিয়ে থাকি, এই আমলকীর  রস এবং মধু  এক সঙ্গে  মিশিয়ে ত্বকে মাখলে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা  অনেকখানি বেড়ে যায়। 


#কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে:শুকনো আমলকি শরীরকে ঠান্ডা রাখা এছাড়াও এটি শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। 


#সর্দি কাশি:আমলকি একটি প্রাকৃতিক  ভেষজ ফল, এর মধ্যে নানা ধরনের ঔষধ গুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।  ঠান্ডা, জ্বর, কাশি, পেটের পীড়া, ইত্যাদি  সমস্যা দূর করে থাকে। 


#নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ দূর হয়:প্রতিদিন আমলকির  রস খেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয়, এছাড়া এটি আমলকীর টক ও তেতো মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়। 




শুকনো আমলকি খাওয়ার নিয়ম, এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা



                                       আমলকির ক্ষতিকর দিক


আমলকী ছোট্ট একটি ফল, এটি কস ও তেতো  ভাব থাকার ফলে এটি খাওয়ার পর মিষ্টি লাগে, এটি কমলার চেয়েও প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে যা শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকে,এছাড়াও এটি শরীরের তর্ক চুল এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে।এছাড়াও এর বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক রোয়েছে নিচে তা আলোচনা করা হলো। 



# লো ব্লাড প্রেসার রোগীদের ক্ষেত্রে:যেহেতু আমলকি উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে, সেই ক্ষেত্রে যাদের লো ব্লাড প্রেসার রোয়েছে তাদের জন্য এই ফল   মারাত্মক ঝুঁকির  কারণ হতে পারে, এতে করে অনেক সময় প্রেশার লো হয়ে যায় এতে করে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। 


#হার্টের সমস্যা হলে:যাদের হাতের সমস্যা হয়েছে তার অবশ্যই আমলকী খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে,কেন না  কিছু কিছু হাটের  ওষুধের সাথে আমলকি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটে। তাই এই সব রোগীদের আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। 


#এসিডিটি প্রবলেম বানিয়ে দেয়: যাদের অতিরিক্ত এসিডিটির সমস্যা রয়েছে  তারা এই ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।  কেননা আমলকিতে অতিরিক্ত এসিডিটি থাকার কারণরে হজম  প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করে থাকে। 


#ডিহাইডেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে:আমলকিতে মূত্র বোধক উপাদান বিদ্যমান থাকায় ঘন ঘন প্রসাব উৎপাদিত হয়, যার ফলে শরীলের ডিহাইট্রেড হয়ে যায় তাই অবশ্যই আমাদের এটি মাথায় রাখা উচিত। 


#চুলের সমস্যা তৈরি:অতিরিক্ত আমলকি খাওয়ার ফলে চুলের শুষ্কতা ভাব বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 


#প্রসাবে জ্বালাপোড়া সমস্যা:সাধারণত  অতিরিক্ত আমলকি খাওয়ার ফলেপ্রসাব এ  জ্বালাপোড়া সহ না ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 


#লিভারের সমস্যা:মাত্র অতিরিক্ত আমলকি খাওয়ার ফলে লিভারের উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে, যার ফলে লিভার তার কার্যক্ষমতা  হারিয়ে ফেলে এবং হজম প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। 



প্রশ্নোত্তর পর্ব:আমলকি বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনাদের  মাঝে তুলে ধরা হলো। 


১/আমলকির রস কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?

উত্তর :হা আমলকির  রস খেলে ওজন কমে, যারা ওজন কমাতে চান তারা সকালে এক কাপ আমলকি রস খেতে পারে এটি  আপনাদের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। 

২/আমলকি তে কি কোনো  পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রোয়েছে?

উত্তর :এটি যেহেতু রক্তের শর্করা পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং  যারা  উচ্চ রক্তচাপ রোগী আছেন তাদের জন্য  এটি বেশ কায্যকর।  কাজেই যাদের লো ব্লাড প্রেসার আছে  তারা অবশ্যই আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। 

৩/দিনে সর্বোচ্চ কয়টি আমলকি খাওয়া যাবে?

উত্তর :সাধারণত প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন একটি থেকে দুটি আমলকি খেতে পারবে  এতে কোন ক্ষতি হবে না, তবে যারা  অসুস্থ রোগী তাদের  ক্ষেত্রে  বেশ কিছু বিধিনিষেদ  রোয়েছে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই  একজন চিকিসক এর পরামর্শ অনুযায়ী  আমলকি খাওয়া আবশ্যক। 


৪/কাদের  আমলকি খাওয়া উচিত না ?

উত্তর :বিশেষ করে যারা গর্ভবতী মায়েরা  এবং যাদের  ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের তাদেরকে আমলকী  না খাওয়া পরামর্শ দিয়ে থাকে। 
 

৫/খালি পেটে আমলকি খাওয়া উচিত কিনা ?


উত্তর : হা খাওয়া যাবে, সকালে খালি পেটে আমলকি খেলে অধিক পরিমাণে উপকার পাওয়া যায়।  তবে যাদের এসিডিটি প্রবলেম রোয়েছে তারা না খাওয়ার  পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক্য গণ। 




উপসংহার:শুকনো আমলকি খাওয়ার নিয়ম এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ে যাবতীয় তথ্য আজকের এই পোস্টে আমি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছি।  আমি আশা করি আপনাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর আজকের এই পোস্টে পেয়ে যাবেন।  যদি আপনাদের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টস করতে ভুলবেন না। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url